রবিবার, ১৭ নভেম্বর ২০২৪, ১২:৩১ অপরাহ্ন
বরগুনা প্রতিনিধি,
বরগুনায় ৪৬ কোটি টাকা ব্যয়ে ৩৩টি লোহার ব্রিজ সংস্কার ও পুনর্র্নিমাণের সেই দরপত্র বাতিল করা হয়েছে। স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদফতরের ওয়েবসাইটের মাধ্যমে এ তথ্য নিশ্চিত হওয়া গেলেও এ বিষয়ে কথা বলতে রাজি হননি সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা। ৪৬ কোটি টাকা ব্যয়ে গত ২৮ জুলাই বরগুনার আমতলী ও তালতলী উপজেলার ৩৩টি লোহার ব্রিজ সংস্কার এবং পুনর্র্নিমাণের জন্য দরপত্র আহ্বান করে বরগুনার স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদফতর।
জানা যায়, এলজিইডির নির্বাহী প্রকৌশলীর বিরুদ্ধে মোটা অঙ্কের অর্থের বিনিময়ে গায়েরি লোহার সেতু দেখিয়ে পুনরায় সংস্কারের প্রাক্কলন তৈরির অভিযোগ উঠে। খাল নেই, ব্রিজও নেই, রয়েছে বাঁশের সাকো। আমতলীর ওই বাঁশের সাঁকোকে আয়রন ব্রিজ দেখিয়ে পুনরায় সংস্কারের প্রাক্কলন তৈরি করে দরপত্র আহ্বান করা হয়। ওই দরপত্র বাতিল করে সরেজমিনে সার্ভে করে পুনরায় প্রাক্কলন তৈরির দাবি জানায় ভুক্তভোগীরা। এ সকল গায়েরি ব্রিজের খবরে এলাকার মানুষের মাঝে তীব্র প্রতিক্রিয়া দেখা দেয়।
গায়েরি ব্রিজ গুলো পুনরায় সংস্কারের দরপত্র বাতিল ও জড়িতদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দাবি করে প্রতিবাদ সভা ও মানববন্ধন কর্মসূচি পালন করেন। এরই পরিপ্রেক্ষিতে মঙ্গলবার (০১ সেপ্টেম্বর) বিকেলে দরপত্রটি বাতিল করা হয়।
এরপর বরগুনার স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদফতরের নির্বাহী প্রকৌশলী ফোরকান আহমেদ খান ৪৬ কোটি টাকা ব্যয়ে আমতলী ও তালতলী উপজেলার ৩৩টি লোহার ব্রিজ সংস্কার এবং পুনর্র্নিমাণের দরপত্রে ত্রুটি-বিচ্যুতির কথা উল্লেখ করে তা বাতিলের অনুরোধ জানিয়ে এলজিইডির প্রধান প্রকৌশলী আবদুর রশীদ খানকে চিঠি দেন। এরপর প্রধান প্রকৌশলীর নির্দেশনা অনুযায়ী এ দরপত্রটি বাতিল করেন বরগুনার নির্বাহী প্রকৌশলী ফোরকান আহমদ খান।
এ বিষয়ে বরগুনার স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদফতরের নির্বাহী প্রকৌশলী ফোরকান আহমদ খান বলেন, এ গুলো পুনরায় সংস্কারের প্রাক্কলন আমি তৈরি করিনি। এর দায়ভার আমার নয়। স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়ের প্রধান প্রকৌশলী ও প্রজেক্ট পরিচালকের নির্দেশে এ দরপত্র আহ্বান করা হয়েছিল।
উল্লেখ্য, বরগুনা স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদফতর ২০২০-২১ অর্থবছরে আইবিআরপি প্রকল্পের আওতায় ওটিএম পদ্ধতিতে ২৮ জুলাই ৮টি প্যাকেজে ৩৩টি আয়রন ব্রিজের পুনরায় সংস্কারের দরপত্র আহ্বান করে। যার প্রাক্কলন ব্যয় দরপত্রে উল্লেখ নেই। আগামী ৬ সেপ্টেম্বর ওই দরপত্রে অংশগ্রহণের শেষ দিন। ওই দরপত্র নোটিশ প্রকাশিত হওয়ার পর বেরিয়ে আসে অনিয়মের তথ্য। ৩৩টি ব্রিজের মধ্যে ২৫টি আমতলী উপজেলার হলদিয়া, গুলিশাখালী ও আমতলী সদর ইউনিয়নে ও আটটি ব্রিজ তালতলী উপজেলায়। ওই দরপত্রের নোটিশে উল্লেখ ছিল আমতলী উপজেলার হলদিয়া ইউনিয়নের বাঁশবুনিয়া খালের দক্ষিণ তক্তাবুনিয়া মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের সামনে আয়রন ব্রিজ। অপরদিকে একই স্কুলের সামনে একই ব্রিজ নাশবুনিয়া খালে দেখানো হয়েছে। দৃশ্যত নাশবুনিয়া নামে কোনো খাল নেই। দক্ষিণ তক্তাবুনিয়া গ্রামের বৃদ্ধ সুশান্ত হাওলাদার ও আবদুল গণি গাজী বলেন, নাশবুনিয়া নামে হলদিয়া ইউনিয়নে কোনো খাল আছে তা জানা নেই। একই ইউনিয়নের তুজির বাজার ও রামজির বাজার নামক স্থানে দুটি ব্রিজ পুনরায় সংস্কারের কথা উল্লেখ রয়েছে ওই নোটিশে। কিন্তু তুজির বাজার ও রামজির বাজারের সামনের হলদিয়া খালে কোনো ব্রিজ নেই। ওই দুই বাজারের খালে রয়েছে বাঁশের সাঁকো। এলাহিয়া দাখিল মাদ্রাসার সামনে ও দক্ষিণ রাওঘা কেরাতুল কোরান মাদ্রাসার সামনে ব্রিজ পুনরায় সংস্কার করার কথা বলা হয়েছে, কিন্তু ওই দুই মাদ্রাসার সামনের খালে ব্রিজ নেই। ওখানেও রয়েছে বাঁশের সাঁকো। তত্ত্বাবধায়ক সরকারের আমলে হলদিয়া ইউনিয়নে ছয়টি ব্রিজের দরপত্র আহ্বান করা হয়। কিন্তু ঠিকাদার একটি ব্রিজ নির্মাণ করে বাকি পাঁচটি ব্রিজ নির্মাণ না করে এলজিইডি কর্তৃপক্ষের যোগসাজশে কাগজকলমে নির্মাণ দেখিয়ে সমুদয় টাকা আত্মসাৎ করেছেন। এই দরপত্রে ওই ছয়টি ব্রিজের নামে পুনরায় সংস্কার দেখিয়ে দরপত্র আহ্বান করেছেন নির্বাহী প্রকৌশলী।